শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ শেরপুর জেলার শ্রেষ্ঠ ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৫’ পেলেন ডা: উম্মে রাকিবা জাহান মিতু। তিনি এর আগে উপজেলা পর্যায়েও ‘অদম্য নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হন।
শেরপুরের নকলা উপজেলার এই কৃতি মেয়ের হাতে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ ও ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর হাতে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান।
এসময় পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা: মুহাম্মদ শাহীন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আরিফা সিদ্দিকা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শাকিল আহমেদ প্রমুখ।

সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে দেশের অন্যতম সেরা চিকিৎসক এবং একজন মানবতাবাদী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ডা: উম্মে রাকিবা জাহান মিতু।
নকলা পৌরশহরের ইশিবপুর মহল্লার এক সাধারণ পরিবারের সন্তান ডা: উম্মে রাকিবা জাহান মিতু। বাবা মো. আবুল হাশেম, মা ফেরদৌসী হাশেম (দুজনই অসরপ্রাপ্ত সুপারভাইজার, সমাজসেবা কার্যালয়)।
নকলা সরকারি পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর ময়মনসিংহের কেবিআই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২০১১ সালে এমবিবিএস পাশ করেন এবং ২০১৩ সালে বিসিএস-এ যোগদান করেন।
বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক (ইনসিটু) হিসেবে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছেন ডা: মিতু। কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা পেশায় একাধিক উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শুধু শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রেই নয়, চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। তাঁর এই অর্জন পরিবার, সহকর্মী এবং পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দ ও গর্বের ছাপ স্পষ্ট করে তুলেছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, তিনি শুধু একজন চিকিৎসক নন, আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাছরিন জাহান জানান, ‘অদম্য নারী’ ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ডা: উম্মে রাকিবা জাহান মিতু শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হন। পরে শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে জেলা পর্যায়েও তিনি শ্রেষ্ঠ হন। তাঁর এই বিজয় নারী সমাজের জন্য এক বিশেষ বার্তা বহন করে।
পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে ডা: উম্মে রাকিবা জাহান মিতু বলেন, “এই সম্মান আমাকে আরও দায়িত্বশীল করেছে। এটি শুধু আমার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, আমার অভিভাবক, শিক্ষক এবং আমার জন্মভূমি নকলা তথা শেরপুর জেলার মানুষের অবদানেই আজকের আমি। আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা মানুষকে শুধু যোগ্য নয়, দায়িত্ববানও করে তোলে।”
তিনি আরও বলেন, “নারী মানেই সক্ষম, নারী মানেই শক্তি। সুযোগ এবং সহায়ক পরিবেশ পেলে মেয়েরা শুধু নিজেদের নয়, সমাজকেও পরিবর্তন করতে পারে।” ভবিষ্যতে শিক্ষা, গবেষণা এবং নারীর ক্ষমতায়ন—এই তিনটি ক্ষেত্রেই আরও কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান এই ‘অদম্য নারী’। তাঁর এই সম্মাননা লাভ নিঃসন্দেহে জেলার নারী সমাজকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আরও অনুপ্রাণিত করবে।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমও তাঁর অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

