কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং সন্ত্রাস দমনে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে পরিচালিত এক বিশেষ শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এটি একটি বড় সাফল্য। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৫) গভীর রাতে হ্নীলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উলুচামারি কোনাপাড়া এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী। অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী মিজান ওরফে লম্বা মিজানের গোপন আস্তানা থেকে এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান:নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ এলাকাটি মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের জন্য বরাবরই সংবেদনশীল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নৌবাহিনী জানতে পারে যে, হ্নীলা ইউনিয়নের উলুচামারি কোনাপাড়া এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মিজান ওরফে লম্বা মিজানের বসতবাড়িতে বড় ধরনের নাশকতার উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করা হয়েছে।
এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের পর শুক্রবার রাতে নৌবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স ‘সোয়াডস’ (SWADS) এবং নৌবাহিনী কন্টিনজেন্ট টেকনাফ যৌথভাবে ওই এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে।
অভিযানের বিবরণ:
অভিযান চলাকালে নৌবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সন্ত্রাসী লম্বা মিজানের বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা সতর্ক অবস্থানে থাকলেও নৌবাহিনীর চৌকস দলের তৎপরতায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাড়িটিতে তল্লাশি চালায়। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই তল্লাশি কার্যক্রমে বাড়ির বিভিন্ন গোপন স্থান থেকে একে একে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ:
মিজান ওরফে লম্বা মিজানের বাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের তালিকা এবং ধরণ দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত স্থানীয়রা। অভিযানের সময় জব্দ করা হয়:
* ১টি বিদেশি পিস্তল।
* ২টি দেশি তৈরি পিস্তল।
* ১টি একনলা বন্দুক।
* ১০টি তাজা গ্রেনেড।
* বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ।
* বেশ কয়েকটি দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্ধারকৃত ১০টি গ্রেনেড অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এগুলো কোনো বড় ধরনের নাশকতার কাজে ব্যবহারের জন্য মজুদ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি সাধারণ বসতবাড়ি থেকে এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ওই এলাকায় সন্ত্রাসীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দেয়।
আইনি ব্যবস্থা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
অভিযান শেষে উদ্ধারকৃত সমস্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মিজান ওরফে লম্বা মিজান এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে।
স্থানীয়রা প্রতিবেদককে জানান, মিজান এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। তার আস্তানা থেকে এই বিপুল অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। ভবিষ্যতে যেন এমন অভিযান অব্যাহত থাকে।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে তাদের এই জিরো টলারেন্স নীতি ও বিশেষ অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
