রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদীর ওপর বর্বরোচিত সশস্ত্র হামলার ঘটনায় সীমান্তে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। হামলাকারী বা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীরা যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য শেরপুর ও ময়মনসিংহ সীমান্তজুড়ে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।
গত ১২ ডিসেম্বর, রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় একদল অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী শরীফ ওসমান হাদীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে। একজন রাজনীতিবিদ ও সংগঠকের ওপর এমন প্রকাশ্যে হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো অপরাধীদের গ্রেফতারে তৎপর হয়ে উঠেছে।
এই ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি সদর দপ্তর থেকে সীমান্তে কঠোর নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি)-এর অধিনস্থ শেরপুর এবং ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সীমান্তের স্পর্শকাতর পয়েন্ট এবং চোরাই পথে যাতায়াতের রুটগুলোতে বিজিবির উপস্থিতি দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীরা যেন কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে দেশত্যাগ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অতিরিক্ত বিশেষ টহল দল মাঠে নামানো হয়েছে।
সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক ও স্থানগুলোতে বসানো হয়েছে একাধিক অস্থায়ী চেকপোস্ট। সেখানে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে চালানো হচ্ছে নিবিড় তল্লাশি। পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কাউকেই সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় চলাফেরা করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং অপরাধীদের পলায়ন রুখতে আধুনিক নজরদারি পদ্ধতির পাশাপাশি ম্যানুয়াল তল্লাশি কার্যক্রমও জোরদার করা হয়েছে।
সীমান্ত সুরক্ষা কেবল অস্ত্র দিয়ে সম্ভব নয়, এ বিষয়টি মাথায় রেখে স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতাও নিচ্ছে বিজিবি। সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাসরত মানুষদের অপরিচিত বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তি দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবি ক্যাম্প বা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিজিবি নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করছে এবং সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে জানান, “শরীফ ওসমান হাদীর ওপর হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। অপরাধীরা যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত ব্যবহার করে পালিয়ে যেতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি। শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রক্ষায় আমাদের সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।”
তিনি আরও জানান, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি বদ্ধপরিকর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সীমান্তে এই কঠোর নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম ও বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ কাজে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকেও সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

