“কৃষিই সমৃদ্ধি”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শেরপুরের নকলা উপজেলায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রবি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের হাতে কৃষি উপকরণ তুলে দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার মোট ৩২’শ জন কৃষককে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। কৃষি বিভাগের স্বচ্ছ তালিকাভুক্ত এসব কৃষক বিনামূল্যে এই সহায়তা পাচ্ছেন।
কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, নির্বাচিত ৪’শ কৃষকে বোর উফসী বীজ ও সার এবং ২৮’শ কৃষককে বিনামূল্যে ৫ কেজি উন্নত মানের উফশী ধানের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার এবং ১০ কেজি এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার প্রদান করা হচ্ছে। বোরো মৌসুমের শুরুতেই সরকারের পক্ষ থেকে এই সহায়তা কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে এবং ধানের ফলন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম কৃষকদের আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আদিকালের সনাতন চাষ পদ্ধতি মনে না রেখে বর্তমানের ডিজিটাল ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির ব্যবহার অপরিহার্য। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিতে আধুনিকায়ন না করলে কাঙ্ক্ষিত ফসল পাওয়া সম্ভব নয়।”
তিনি কৃষকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, “সরকার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিনামূল্যে প্রদত্ত এই বীজ ও সারের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি বিভাগ সব সময় আপনাদের পাশে আছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ মেনে চাষাবাদে মনোনিবেশ করলে কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তাবাসসুম মকবুলা দিশা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাগর চন্দ্র দে, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফারিহা ইয়াসমিন, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ, উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত সুবিধাভোগী কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। বিনামূল্যে সার ও বীজ পেয়ে উপস্থিত কৃষকরা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
তারা জানান, সময়মতো এই প্রণোদনা পাওয়ায় বোরো আবাদে তাদের আগ্রহ আরও বাড়বে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এই প্রণোদনার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নকলা উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় তা বিশেষ অবদান রাখবে।


