কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেরপুরের নকলা উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির কারণে চরম বিপাকে পড়ে গেছে বার্ষিক পরীক্ষা। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষিত সচেতন অভিভাবকেরা। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) নকলা পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখা যায় সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে থাকায় কক্ষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় অভিভাবকরা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, পরীক্ষার ঠিক পূর্বমুহূর্তে শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কি না তা এমন অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় অনেক পরিবার আতঙ্কে ছিলেন। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধ ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় তারা নিজেরাই পরীক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

নকলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কক্ষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালনকারী এক নারী অভিভাবক জানান, ‘সারা বছর বাচ্চারা পরিশ্রম করে লেখাপড়া করেছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই তাদের বছরব্যাপী পরিশ্রমের মূল্যায়ন হয়। কিন্তু শিক্ষকদের এমন কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের রোল নির্ধারণসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, অভিভাবকরাও সারা বছর সন্তানদের নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেন; সেই পরিশ্রম যেন মূল্যহীন হয়ে না যায়, সে কারণেই তারা কক্ষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছেন।
আরেক নারী অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি অবশ্যই থাকতে পারে, কিন্তু শিশুদের পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনে যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। চাইলে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে কর্মসূচি চালাতে পারতেন। বার্ষিক পরীক্ষার সময় কর্মবিরতির কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও হতাশ হয়ে পড়েছে।’
বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজন করতে হচ্ছে। তবে সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাদের অবস্থান উপেক্ষা করা কঠিন। প্রধান শিক্ষকরা সরাসরি আন্দোলনে না থাকলেও সহানুভূতিশীল অবস্থান বজায় রাখছেন বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। ফলে শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখতে অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
শিক্ষিত সমাজের দাবি, ন্যায্য হলে শিক্ষকদের দাবিগুলো দ্রুত সময়ে সমাধান করা জরুরি। তবে সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেন কোনো ধরনের ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
