নাগরিক সেবা সহজীকরণ, নিরাপত্তা জোরদার এবং নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শেরপুরের নকলা পৌরসভায় যুক্ত হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে নকলা পৌরসভা কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সিসিটিভি ক্যামেরা নেটওয়ার্ক’ এবং মায়েদের জন্য ‘মাতৃদুগ্ধ পান কর্নার’ (ব্রেস্টফিডিং কর্নার)-এর উদ্বোধন করা হয়।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তরফদার মাহমুদুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হয়েছে, যা স্থানীয় নাগরিকদের মাঝে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।
এ সময় সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আফরিন এ্যানি, নকলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফিরোজ হোসেন, উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামছুল হক রাকিব, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুমান হাসান, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা অবদুল মোতালেব, সহকারি প্রকৌশলী ফকর উদ্দিন আহমেদ, উপ-সহকরি প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) বাবুল হোসেন, হিসাবরক্ষক ফেরদৌসুর রহমান, সুপারভাইজার ফজলে রাব্বি রাজন, পৌরসভার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পৌর এলাকাকে একটি স্মার্ট ও নিরাপদ জোন হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো এবং পৌর ভবনকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে পৌর এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং অপরাধ দমনে প্রশাসনের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পৌর শহরের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন,“শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানোয় আমরা ব্যবসায়ীরা এখন অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করছি। আগে ছোটখাটো চুরির ঘটনা বা ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে ভোগান্তি হতো। এখন ক্যামেরার নজরদারি থাকায় অপরাধীরা ভয় পাবে এবং শহরের শৃঙ্খলা ফিরবে। এটি পৌর প্রশাসনের একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।”
পৌরসভায় সেবা নিতে আসা মা ও শিশুদের ভোগান্তি কমাতে এবং তাদের গোপনীয়তা রক্ষার্থে পৌর ভবনের ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে সুসজ্জিত ‘মাতৃদুগ্ধ পান কর্নার’। গ্রামীণ বা শহরতলি থেকে আসা মায়েরা এতোদিন পাবলিক প্লেসে শিশুদের খাওয়াতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তেন। এই কর্নারটি সেই দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করেছে।
সেবা নিতে আসা এক গৃহিণী তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, “বাচ্চাকে নিয়ে বিভিন্ন কাজে পৌরসভায় আসতে হয়। আগে বাচ্চা কান্না করলে তাকে খাওয়ানোর জন্য কোনো নিরিবিলি জায়গা পেতাম না, যা খুব লজ্জার ও কষ্টের ছিল। আজ এখানে আলাদা একটি কর্নার দেখে খুব ভালো লাগল। এখন নিশ্চিন্তে ও পর্দার সাথে বাচ্চাকে সময় দেওয়া যাবে। মায়েদের কথা চিন্তা করার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ।” নাগরিকরা মনে করছেন, প্রশাসনের এমন উদ্যোগ নকলা পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে এবং জনজীবনের মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পৌর প্রশাসক ও ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমাদের লক্ষ্য নকলা পৌরসভাকে একটি আধুনিক, জনবান্ধব ও স্মার্ট পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলা। সিসি ক্যামেরা যেমন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, তেমনি ব্রেস্টফিডিং কর্নারটি মায়েদের সম্মান ও শিশুর অধিকার রক্ষা করবে। আমরা পর্যায়ক্রমে আরও জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করব।”
উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান পৌর ভবনের বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন এবং পৌর প্রশাসনের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “পৌর এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পাশাপাশি, সেবা নিতে আসা মায়েদের জন্য ‘মাতৃদুগ্ধ পান কর্নার’ স্থাপন প্রশাসনের নারীবান্ধব ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। এই উদ্যোগ মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
