ছোট্ট সন্তানকে কোলে নিয়ে—এক হাতে মোবাইল, আরেক হাতে বই—এভাবেই প্রতিদিন কিছুটা সময় পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন মনিরা ইয়াসমিন মুক্তা। প্রায় দুই বছর আগে তার পড়াশোনা শেষ হলেও সন্তানের দেখাশোনার কারণে বাইরে কোথাও গিয়ে কোচিং করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
যথেষ্ট যোগ্যতা থাকার পরও সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে না পারায় চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছিলেন না তিনি। ধীরে ধীরে হতাশা তাকে গ্রাস করছিল, আত্মবিশ্বাসও নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছিল।
তবুও হার মানেননি মনিরা। সন্তানকে আঁকড়ে ধরেই ঘরে বসেই নিজের মতো করে চালিয়ে গেছেন প্রস্তুতি—কখনও রাতে, কখনও ভোরে, আবার কখনও ঘুমন্ত সন্তানের পাশে নিঃশব্দে পড়াশোনায় মনোযোগী থেকেছেন।
ঠিক তখনই একদিন এক পরিচিতের কাছ থেকে জানতে পারেন ‘প্রিয় শিক্ষালয়’ অ্যাপ সম্পর্কে। তার কথাতেই গুগল প্লে-স্টোর থেকে priyoshikkhaloy লিখে সার্চ দিয়ে ইনস্টল করে নেয় অ্যাপটি। অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোড করে প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও ধীরে ধীরে সেটাই হয়ে উঠেছে এখন তার সবচেয়ে বড় ভরসার স্থল। এখন আর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, সন্তানকে সময় দিয়েও নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ প্রস্তুতি । আশা করছেন খুব শ্রীঘ্রই আসবে সফলতা, জানালেন মনিরা ইয়াসমিন মুক্তা।
প্রায় একই গল্প অভিজিৎ-এরও। আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ভোটানিতে অভিজিৎ চক্রবর্তী পড়াশোনা শেষ করে পারিবারিক ব্যবসার দায়-দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে প্রস্তুতি নেয়ার সময় হয়ে উঠছিল না তার জন্য। ফেসবুকে একদিন চোখে পড়ে ‘প্রিয় শিক্ষালয়’ অ্যাপের একটি বিজ্ঞাপন। ডাউনলোড করে পড়াশোনা শুরু করেন। আর শুধু এই অ্যাপ ব্যবহার করেই উত্তীর্ণ হন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায়, সুপারিশপ্রাপ্ত হন শিক্ষক হিসেবে। কৃতজ্ঞতা জানান ঘরে বসে নেয়া যায় প্রস্তুতির এমন প্লাটফর্মটির প্রতি।
মনিরা কিংবা অভিজিৎ—এরা কেউ একা নন। এমনই হাজারো চাকরি প্রত্যাশী যারা পরিবার, সময় বা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতায় প্রাতিষ্ঠানিক কোচিংয়ে যেতে পারেন না, তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে প্রিয় শিক্ষালয় নামের এই অ্যাপটি।
২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে অ্যাপটি। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ইতোমধ্যে গুগল প্লে স্টোরে ১ লাখেরও বেশি ডাউনলোড অতিক্রম করেছে।
দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের সংকট মোকাবেলায় প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগটি হয়ে উঠছে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত। অ্যাপটি থেকে উপকৃত হচ্ছেন হাজার হাজার বেকার যুবক, চাকরি প্রত্যাশী, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরাও।
এই অ্যাপ ব্যবহার করেই ইতোমধ্যে চাকরি পেয়েছেন সামিউল, ইরা, আতিক, সাইদের মতো বহু তরুণ।
শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, অ্যাপটি একযোগে কাজ করছে শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্যও একটি ভার্চুয়াল রিসোর্স সেন্টার হিসেবে।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চাকরির প্রস্তুতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের একজন খ্যাতনামা শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করে আসছেন এক্স-ঢাবিয়ান মো. আমিনুল ইসলাম। তার অভিজ্ঞতা ও দিকনির্দেশনাও যুক্ত হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মের শিক্ষায়।
তথ্যমতে, Google Ply Store অ্যাপটির রেটিং রয়েছে ৪.৮ এবং কয়েক হাজার ব্যবহারকারী প্রশংসাসূচক রিভিউ দিয়েছেন। রিভিউতে লিখেন, শুধু সময় বাচায় না অ্যাপটি, সঠিক দিকনির্দেশনাও দেয়। এই অ্যাপের মাধ্যমেই ইতোমধ্যে অনেকেই পেয়েছেন চাকরি, বদলে গেছে তাদের ভবিষ্যৎ। আগামীদিনগুলোতে যদি আপডেটের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে নতুন নতুন ফিচার এবং উদ্ভাবনের মধ্যদিয়ে দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল এ শিক্ষায় সম্পৃক্ত করা যায় তবে এটি হয়ে উঠবে চাকরি প্রত্যাশিদের এক নির্ভরযোগ্য সহযাত্রী এমনটাই মনে করেন চাকরি প্রত্যাশিরা। বেকারত্ব মোকাবেলায় শিক্ষা প্রযুক্তিতে সম্ভাবনার নতুন দিক প্রিয় শিক্ষালয়



