ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এক নতুন এবং ভয়ংকর মোড় নিয়েছে। গত ১৯ জুন ইরানের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কেন্দ্র, বেন-গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছয়টি অত্যাধুনিক গবেষণাগার সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে, যা ইসরায়েলের চিকিৎসা ও বিজ্ঞান গবেষণাকে কয়েক দশক পিছিয়ে দিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক হৃদয়বিদারক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই হামলা শুধু আমাদের গবেষণাগারের দেয়ালে আঘাত হানেনি, এটি আমাদের বহু বছরের সাধনা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞানের অমূল্য গবেষণাপত্র, গুরুত্বপূর্ণ ডেটা এবং কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি চোখের পলকে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ক্ষতি পূরণ করা প্রায় অসম্ভব।” প্রাথমিক হিসাবে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শত শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, হাসপাতাল এবং আবাসিক এলাকাও লক্ষ্যবস্তু
এই পাশবিক হামলা শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত দক্ষিণ ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল, সোরোকা মেডিকেল সেন্টার। হাসপাতালের সার্জিক্যাল বিভাগের একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বহু রোগীকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। যদিও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থার কারণে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে, তবে হামলায় প্রায় ৭০ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনাটি প্রায় দশ লক্ষ মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী এই হাসপাতালটির কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাতেও। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত ভবনগুলোতেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এই হামলায় প্রায় ১০০ জন বাসিন্দার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে এবং কয়েক ডজন পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হয়। এক রাতের মধ্যে তারা নিজেদের আবাস হারিয়ে শরণার্থীতে পরিণত হয়েছেন।
সামরিক স্থাপনার বাইরে এসে শিক্ষা ও চিকিৎসাকেন্দ্রের মতো বেসামরিক প্রতিষ্ঠানে হামলা ঘটনাটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা সামরিক সংঘাত নয়, বরং ইসরায়েলের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে পঙ্গু করে দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। জ্ঞান ও গবেষণার কেন্দ্রে আঘাত হেনে একটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করাই হয়তো এর মূল উদ্দেশ্য।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই নারকীয় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এটিকে “বেসামরিক জীবনের ওপর সরাসরি আঘাত” এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। যখন একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে এই ধরনের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও জটিল এবং অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুধু ইসরায়েলের অবকাঠামো নয়, বরং জ্ঞান, মানবতা এবং শান্তির আশাও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।
