Home » নকলায় ইউএনওর দপ্তরে অসদাচরণের অভিযোগে সাংবাদিক কারাগারে

নকলায় ইউএনওর দপ্তরে অসদাচরণের অভিযোগে সাংবাদিক কারাগারে

by desherpotrika
100 views

স্টাফ রিপোর্টার: শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে অসদাচরণের অভিযোগে সাংবাদিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি, সরকারি বিভিন্ন ফাইল ছিড়ে ফেলা ও অসদাচরণের অভিযোগে গত মঙ্গলবার নকলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এই কারাদণ্ড দেন।

কারাগারে যাওয়া ওই সাংবাদিকের নাম শফিউজ্জামান রানা। তিনি দৈনিক দেশ রূপান্তরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা। বর্তমানে তিনি শেরপুর জেলা কারাগারে বন্দী। কারাগারে যাওয়ার ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষে মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানাগেছে। সাংবাদিক রানা দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর, রাজনৈতিক ব্যাক্তি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন জনের নামের তার নিজস্ব ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) মিথ্য তথ্য বিভ্রাটসহ সামাজিক ভাবে হেয় করে আসছিল। সাংবাদিক রানা বেশ কিছুদিন যাবৎ বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে বাধা সৃষ্টিও করে আসছিল। বেশ কিছুদিন আগেও ইউএনওর সিএ মিলনের নামে ফেসবুকে মিথ্যা হয়রানী মূলক লেখালেখি করায় তার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা হয়। জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের দালাল, ব্রোকার বলেও তার ফেসবুকের নিজস্ব টাইম লাইনে প্রকাশ করে আসছিল। এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধায় উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা এক জরুরী সভার আয়োজন করে। ওই জরুরী সভায় সবাই একমত প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এসময় সাংবাদিক সাংবাদিক শাহ মো. ফুয়াদ হোসেন, মোশারফ হোসাইন, হারুনুর রশিদ, জাহাঙ্গীর হোসেন আহমেদ, ইউসুফ আলী মন্ডল, মোশারফ হোসেন সরকার বাবু, খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু, শফিউল আলম লাভলু, সেলিম রেজা, দেলুয়ার হোসেন, ফজলে রাব্বী রাজন, রাজন, নূর হোসেন, রেজাউল হাসান সাফিত, আরিফুর রহমান, আইনুল নাইম, আব্দুল্লাহ আল আমিন, রাইসুল ইসলাম রিফাত, মো. সুজন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়ী রুমান জানান, আমার সেমাই কারখানায় কয়েকদিন পরপর চাঁদা আনতে যায় রানা। চাঁদা না দিলে মোবাইল কোর্ট করিয়ে জরিমানা করাবে বলে হুমকীও দেয়। ঠিকাদার রাজীব বলেন, আমি রাস্তার উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় সাংবাদিক রানা কাজে বাধা দেয়। আমরা পুরোপুরি তার কাছে জিম্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ রোগী দেখছেন। উন্মুক্ত থেকে পড়াশুনা করে কি কখনো ডাক্তার হওয়া যায়। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণ করতেছে। তার সাঁজা হওয়াতে আমরা খুসি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান সুজা বলেন, আমার রাজনৈতিক পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় সাংবাদিক রানা। এ বিষয়ে আমি থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। তার সাঁজা হওয়াতে একটু স্বস্তিতে আছি। নকলা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন বলেন, সাংবাদিক রানার কাজ কর্ম সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ করেন। সারাক্ষন ফেসবুকে কাউকে না কাউকে নিয়ে মন্তব্য করে আসে। মানুষকে মিথ্যা লেখা লিখে হয়রানী করে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, সাংবাদিক রানা আগে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতো। তার অপকর্মের জন্য তাকে পত্রিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। মাঝে মধ্যে সে সরকারি প্রোগ্রাম গুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বয়কট করে। মানুষকে মিথ্যা সংবাদের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে। পরে টাকা দাবী করে। তার সাঁজা হওয়াতে আমরাও খুসি। সে পুলিশ সুপারকে নিয়েও ফেসবুকে হয়রানী মূলক লেখা পোষ্ট করেছিল।

জানাযায় সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, গত মঙ্গলবার আমার স্বামী তাঁর ছেলে শাহরিয়ার জাহানকে সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন জমা দেন। আবেদনটি কার্যালয়ের সিএ শীলার কাছে দিয়ে রিসিভড কপি চান। শীলা তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। অপেক্ষা করার পর আবার শীলার কাছে অনুলিপি চান। তখন শীলা বলেন, ‘ইউএনওকে ছাড়া রিসিভড কপি দেওয়া যাবে না।’ পরে রানা জেলা প্রশাসককে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান। এতে ইউএনও ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ইউএনও এবং সিএ শীলার সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে আমার স্বামীকে আটক করে। পরে এসিল্যান্ড ওই কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে রানাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। আমি রানার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহাকারি কমিশনর (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ বলেন, সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে সরকারি অফিসে অনুপ্রবেশ করে হট্টগোল, সরকারি কাজে বাধা, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও অসদাচরণের অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় এবং একজন নারী কর্মচারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন বলেন, ‘সাংবাদিক রানা তথ্য চেয়ে আবেদন করেছেন ফেব্রুয়ারীর ১৮ তারিখে। ঘটনার দিন নতুন করে তথ্যের আবেদন বা তথ্য চাওয়ার কোন বিষয় ছিল না। পূর্বের আবেদনের তথ্য তিনি সেদিন চেয়েছিলেন। আমি বলি তথ্যগুলো প্রস্তুত করতেছি। আমার হাতে তথ্য দেওয়ার জন্য ২০ দিন সময় আছে। কিন্তু রানা সিএ শীলার কাছে থাকা তথ্যের ফাইল টানাটানি করেন এবং নানা ধরনের অশালীন ভাষায় কথাবর্তা বলেন। তিনি অসদাচরণ করেছেন। এতে অফিসের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তাই আমি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছি।’ পুরো ঘটনাটি না জেনে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে হচ্ছে। আমার গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে অনুরোধ থাকবে পুরো বিষয়টা জেনে খবর করুন।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ মফস্সল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আহমেদ আবু জাফর তীব্র নিন্দা জানিয়ে শফিউজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। সাংবাদিককে তথ্য না দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

x
error: কপি করার অভ্যাস ত্যাগ করুন নিজে লিখতে শিখুন