Home » দেশজুড়ে কৃতিত্বের অপেক্ষায় নকলার মেয়ে কবি মার্জেনা চৌধুরী

দেশজুড়ে কৃতিত্বের অপেক্ষায় নকলার মেয়ে কবি মার্জেনা চৌধুরী

by desherpotrika
786 views

রাইসুল ইসলাম রিফাত (স্টাফ রিপোর্টার): শেরপুরের নকলা উপজেলার নকলা ইউনিয়নের ডাকাতিয়াকান্দা মধ্য নকলা গ্রামের মৃত হুরমুজ আলী ও মৃত জুলেখা বেগম এর ৮ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান কবি মার্জেনা চৌধুরী কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে পাঠকদের মন জুগিয়ে পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধে এবার দেশজুড়ে সুনাম অর্জনের অপেক্ষায় একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশে লেখে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

১৯৭২ সালে হরমুজ ও জুলেখা দম্পতির সর্বকনিষ্ঠ কন্যা হিসেবে জন্ম নেওয়া মেয়ে কবি মার্জেনা চৌধুরী অন্ধকারের পথে ছড়িয়েছে জোনাকি পোকা। যার মিট মিট আলোতে কেটে যাচ্ছে অন্ধকারের আচ্ছনতা।

বিংশ শতাব্দীর পর বাংলার মাটিতে প্রতিবাদী, প্রকৃতি প্রেমী ও বিরহের কবি দেখা মেলেনি আজও। তবে গুনগত মান বজায় রেখে একের পর এক কবিতা, ছড়া আর প্রগতিশীল লেখার মধ্য দিয়ে দেশবাসীর মনে জায়গা করে নিচ্ছেন মার্জেনা চৌধুরী।

সময় যখন অনলাইন এর যুগে, সাহিত্যে অন্ধকার নেমে আসছে যখন অবাধ্য হয়ে, তখন নিরলসভাবে সাহিত্যচর্চায় থেমে থাকেননি কবি মার্জেনা চৌধুরী।

নকলার মেয়ে মার্জেনা চৌধুরী ডাকাতিয়াকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হোন নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে (প্রাক্তন গার্লস স্কুল)। এরপর এসএসসি পাসের পর ভর্তি হোন নকলা সরকারি হাজী জালমাহমুদ কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করার পর একই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

মার্জেনা চৌধুরী মূলত শৈশব থেকেই লেখালেখির প্রতি ছিলো অসীম আগ্রহী। ছোট থেকেই ছিলো অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমতী একজন মেয়ে।

তিনি প্রাথমিক শিক্ষা জীবনে অনেক ছড়া কবিতা লিখলেও প্রকাশ হওয়ার সুযোগ ছিলোনা তেমন কোনো পত্রিকা বা কাব্যগ্রন্থে। তবে স্কুল ও কলেজ জীবনে তার অসংখ্য লেখা প্রকাশ হয়েছে সে সময়ের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক শেরপুর’ ও ‘সাপ্তাহিক মদিনা’ পত্রিকায়।

তার প্রথম কবিতা “একুশ আমার” জায়গা করে নিয়েছিলো নব্বই দশকের পাঠকদের মনে।

পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালের ১২ জানুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকাস্থ এক সম্ভান্ত্র পরিবারের সন্তান মো: শামস চৌধুরী সাদীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে ধাবিত হন। জানা যায়, মার্জেনা চৌধুরীর শশুড় আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছিলেন অনেক সুনামধন্য একজন শিক্ষক ও লেখক। তিনি সে সময়ের জনপ্রিয় একটি বই ‘পৃথিবীর পথে’ নামক বইয়ের লেখক। এছাড়াও তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন ও মধ্যযুগ (১৯৫১), কবি কায়কোবাদ (১৯৫২), শহীদের কারবালা (কাব্যগ্রন্থ), কয়েকটি তারা (কাব্যগ্রন্থ) উল্লেখযোগ্য।

মার্জেনা চৌধুরী বিবাহিত জীবনে লেখালেখি থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও স্বামী ও শশুড় এর লেখালেখির অভ্যাস দেখে তিনি সংসার জীবনে নানান প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পিছিয়ে যাননি লেখালেখি থেকে।

জানা যায়, মার্জেনা চৌধুরীর শশুড় বাংলা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। অধ্যয়নকালে রাজশাহী-ঢাকা এবং চাকুরিকালে পাবনা-সিলেট-নওগাঁ-ঢাকা ইত্যাদি অঞ্চল সম্পর্কে ভালোভাবেই জেনেছেন। সে সমস্ত স্থানে শিক্ষক ও শিক্ষক ব্যতীত বহু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি শাহবুদ্দিন, সমালোচক সুবোধ সেনগুপ্ত, চিন্তাবিদ কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, বরকত উল্লাহ, সাহিত্যিক মুনীর চৌধুরী, মোহিত লাল মজুমদার, কবি জসীম উদ্দীন, লেখক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সহ আরও অনেক স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিত্ব। এসব জায়গা এবং এসব ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে রচিত করেছেন স্মৃতিকথা ‘পৃথিবীর পথে’। তা পাঠকালে শুধু ঐতিহাসিক তথ্যই পাওয়া যায়নি , তার সাথে পাওয়া গেছে প্রতিভাদীপ্ত স্মৃতিকথা পাঠের আনন্দ। তিনি একজন সাহিত্যিক যাঁর রয়েছে পরিচ্ছন্ন চিন্তা, শক্তিশালী যুক্তি, শৈল্পিক উপস্থাপনা সর্বোপরি রসবোধ।

মুহম্মদ আব্দুল লতিফ চৌধুরী (জন্ম: ২৪ অক্টোবর ১৯২২- মৃত্যু: ২৩ জুন ১৯৯৫) পাংশা থানার হাবাসপুর কাশিম বাজার রাজ হাই স্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে লেটার সহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করার পর রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৪৯ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বেসরকারি জগন্নাথ কলেজ ও পরে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে (বেসরকারি) অধ্যাপনা করেন। এই বছর ডিসেম্বর মাসে তিনি সরকারি সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজে যোগদান করেন এবং সেখানে ১০ বছর অবস্থান করেন। তারপরে ১৯৫৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকা কলেজে আসেন। এখানে ১২ বছর অধ্যাপনার পর ১৯৭০ সালের শেষের দিকে প্রমোশন পেয়ে তিনি রাজশাহী কলেজে যান। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় বার প্রমোশন পেয়ে রংপুর সরকারি কার মাইকেল কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে যান। ১৯৮১ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে সেখানে এক বৎসর অবস্থান করেন। ১৯৮২ সালের প্রথম দিকে বদলি হয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে যান এবং অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালের প্রথম দিকে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং চার বছর ঢাকা মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

মার্জেনা চৌধুরী তার শশুড় এর অনুপ্রেরণা তে শশুড় এর মৃত্যুর পরও লেখালেখি তে থেমে থাকে নি আজও। যদিও বিবাহজীবনে খুব কম সময়ই পেয়েছিলেন তার শশুড় সুনামধন্য অধ্যক্ষ ও লেখক মুহম্মদ আব্দুল লতিফ চৌধুরী কে।

তবে, মার্জেনা চৌধুরী ও তার স্বামী শামস চৌধুরী সাদী দুজনই ভালো মানের লেখক হিসেবে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মন জুগিয়েছেন। তার স্বামী শামস চৌধুরীরও রয়েছে অসংখ্য প্রকাশনা।

স্বামী শামস চৌধুরী মূলত তার বাবা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ও মাতা খুলনার জমিদার কন্যা সামছুন নাহার চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেছেন। যার ধারা এখনো অব্যহত রয়েছে।

কবি মার্জেনা চৌধুরী সহ তার বিবাহিত সংসারের পুরে পরিবার যেনো অসীম মেধার অধিকারী!

গত ২২ আগষ্ট প্রায় দুই ঘন্টা সাক্ষাৎকারের সময় একপর্যায়ে উঠে আসে তার সন্তানদের কথা,
মার্জেনা চৌধুরী দুই কন্যা সন্তানের জননী। দুই মেয়েই চমৎকার ও অতুলনীয় মেধার অধিকারী।
বড় মেয়ে সামীহা চৌধুরী ইংলিশ মিডিয়াম এ সুনামধন্য এক প্রতিষ্ঠানে ‘এ লেবেল’ এ পড়াশোনা করছেন। ছোট মেয়ে সিমীন চৌধুরীও ইংলিশ মিডিয়াম এ অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।

আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, কবি মার্জেনা চৌধুরীর ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া একজন মেয়ে ক্ষুদে বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি ও পরিচিতি লাভ করেছেন দেশ ও দেশের বাইরে।

সিমীন চৌধুরী বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন সহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের সুপরিচিত মুখ। অল্প বয়সেই তৈরী করেছেন অনেক অলৌকিক সৃষ্টি। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ থেকেও পেয়েছে একাধিক সম্মাননা।

এ বিষয়ে তার মা কবি মার্জেনা চৌধুরী বলেন, আমার দুই মেয়েই মেধাবী তবে ছোট মেয়ে অসাধারণ মেধার অধিকারী, যাকে গড গিফটেড বলা যায়। সিমীন সাধারণ কোনো মেয়ে না, তার মেধায় এত অল্প বয়সে পৃথিবী জুড়ে প্রশংসায় ও পরিচিতিতে সে অবাক করে দিয়েছে আমাদের। তবে তাকে আমরা এ নিয়ে আপাতত জনসম্মুখে প্রকাশ করছিনা, বিষয়টি আমরা নিজেদের মাঝে রেখেছি। কারণ তার স্বপ্ন আরও অনেকদূর যা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সে এ ব্যাপারে কোনো সাক্ষাৎকার বা জনসম্মুখে আসতে রাজি নয়।

পরবর্তীতে মার্জেনা চৌধুরী কে অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি নকলার মাটির প্রতি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি নকলার মাটি ও মানুষের প্রতি টান ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে যান। তিনি স্মৃতিচারণ করেন তার নানান অতীত।

সাহিত্যজীবনে কবি মার্জেনা চৌধুরী থাকতে চেয়েছিলেন অগোচরে, তবে তার বয়স এখন প্রায় অর্ধশত। তাই বাকীজীবন বা অনন্তজীবন যেনো কীর্তি ও কর্মের ফলে তাকে বাঁচিয়ে রাখে অনন্তকাল সে লক্ষ্যে এবং তার শুভাকাঙ্ক্ষী পাঠকদের অনুরোধে প্রকাশ করছেন একটি কাব্যগ্রন্থ। যার নাম “শঙ্খ নদীর নীল পদ্ম” যেখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক কবিতা ছড়া ও গল্প।উল্লেখ যোগ্য যে, মার্জেনা চৌধুরীর লেখা অত্যন্ত সৃজনশীল হওয়ায় সূর্য ঘড়ি প্রকাশন মার্জেনার কাব্যগ্রন্থ টি বিনামূল্যে এবং কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দ্বারা ব্যায় বহন করছে।

যা প্রকাশ পেতে যাচ্ছে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকেই। এটাই হবে সূর্যঘড়ির প্রকাশনায় মার্জেনার লেখায় প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। যা হাজারো পাঠকদের মন কেঁড়ে নিবে বলে বিশ্বাস লেখক মার্জেনার। এছাড়াও আরও কিছু কাব্যগ্রন্থ লেখার ও প্রকাশ করার ধারা অব্যহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

এতদিন বিভিন্ন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ব্যক্তিগত ওয়ালে তার লেখাসমূহ প্রকাশ করলেও সামনের মাস থেকে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন বইমেলা ও বাজারের শিক্ষা ও পুস্তক বিষয়ক দোকানে পাওয়া যাবে কবি মার্জেনার লেখায় কাব্যগ্রন্থসমূহ।

কবি মার্জেনা চৌধুরী সম্পর্কে তার নিয়মিত পাঠক নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশারফ হোসাইন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, কবি মার্জেনা চৌধুরী আমাদের সবার কাছে পরিচিত একজন মুখ। বর্তমান সময়ে এরকম স্বচ্ছ লেখক পাওয়া অনেকটাই সৌভাগ্যের বিষয়। তাছাড়া তিনি নকলার কৃতি সন্তান। আমরা নকলাবাসী এই কবির লেখনিকে শ্রদ্ধা জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই দেশ ও জাতীর উন্নয়নে প্রতিনয়ত লেখায় ব্যস্ত থাকায়।

এছাড়াও এ বিষয়ে নকলা ক্রিকেট ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নকলা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এমএফ জামান ফারুক জানায়, কবি মার্জেনা চৌধুরী আমার আপন খালা, তিনি যেভাবে কবিতা, ছড়া বা বিভিন্ন প্রসঙ্গে লেখালেখি করেন তা নিসন্দেহে পাঠকদের সন্তুষ্ট করে। আমি তার ভাগিনা হিসেবে গর্ববোধ করি।

এ বিষয়ে তার আরও কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ও পাঠকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, কবি মার্জেনা চৌধুরী নিসন্দেহে একজন বড় মনের কবি ও সুআদর্শিত লেখক। তার লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ “শঙ্খ নদীর নীল পদ্ম” সারা দেশজুড়ে পাঠকদের মনে জায়গা করে নিবে।

মার্জেনা কৃতিত্বে আর প্রশংসায় পুরো দেশজুড়ে পরিচিতি লাভ করবে বলেও বিশ্বাস শুভাকাঙ্ক্ষীদের।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

x
error: কপি করার অভ্যাস ত্যাগ করুন নিজে লিখতে শিখুন