Home » তিন ফুট লম্বা বরের পাঁচ ফুট লম্বা কনে: ৫ শতাধীক লোককে দিলেন বৌভাতের দাওয়াত

তিন ফুট লম্বা বরের পাঁচ ফুট লম্বা কনে: ৫ শতাধীক লোককে দিলেন বৌভাতের দাওয়াত

by desherpotrika
5656 views

শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরে ধুমধামে শারীরিক প্রতিবন্ধী মোটরসাইকেল মিস্ত্রী খোরশেদ আলমের বিয়ে সম্পুর্ণ হয়েছে। খোরশেদ আলম সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্য বয়ড়া গ্রামের মোহন মিয়া ও খোদেজা বেগমের সন্তান। তারা ৪ ভাইবোন। তবে তার মতো কেউ প্রতিবন্ধী নয়।

১১ আগষ্ট শুক্রবার রাতে শহরের দিঘারপাড় মহল্লার বাচ্চু মিয়ার কন্যা বর্ষা আক্তারের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় এবং ১২ আগষ্ট শনিবার দুপুরে তার নিজ বাড়িতে ৫ শতাধিক লোককে দাওয়াত দিয়ে জমজমাট বৌভাত অনুষ্ঠান করা হয়।

খোরশেদ আলমের বাবা মোহন মিয়া জানায়, খোরশেদ আলম জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বর্তমানে তার বয়স ২৮ বছর। বয়স ২৮ হলেও শারীরিক ভাবে দৈহিক উচ্চতা মাত্র সাড়ে ৩ ফুট। অর্থাভাবে তাকে ৫ম শ্রেণির বেশী পড়াতে পারিনি। তাই পারিবারিক দারিদ্রতার কারণে এবং জীবিকার তাগিদে প্রায় ১৪ বছর আগে শহরের তিনআনী বাজারস্থ একটি মোটর সাইকেল গ্যারেজে শ্রমিকের কাজে যোগ দেয় এবং অদ্যাবদি সে ওখানেই কাজ করছে। এর আগে তিনি ৫ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় দৈন্যতার কারনে একটি সার্কাস দলে যোগ দেয়। সেখানে তার ভালো না লাগলে ৪/৫ মাস থাকার পর চলে এসে কিছু দিন বাড়িতে বসে থাকেন।

খোরশেদের মা খোদেজা বেগম জানায়, প্রথমে তার ছেলের কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মন ভেঙ্গে যায়। এরপর ধৈর্য ধরে থেকে অবশেষে তার জন্য মেয়ে পাওয়া যায়। শারীরিক গঠন যাই হোক বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছিল তাই তার বিয়ের জন্য অনেকদিন থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। অবশেষে মেয়ে পেয়ে গেলাম এবং বিয়েও দিয়ে দিলাম। মেয়ের বাবাও হতদরিদ্র তাই কোন রকম যৌতুক ছাড়াই পুরো বিয়ের খরচ আমরাই বহন করছি।

খোরশেদ জানায়, প্রথমে তাকে কোথাও কাজে না নিলেও এক পর্যায়ে শহরের তিনআনী বাজার মহল্লার আমিনুল ইসলামের মোটর সাইকেল গ্যারেজে কাজে নেয়। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিন দিন তার কাজের দক্ষতায় তাকে শহরে পরিচিতি করে দেয় এবং সে এখন দক্ষ মোটর সাইকেল মিস্ত্রী।

স্থানীয়রা জানায়, খোরশেদ একজন প্রতিবন্ধী হয়েও পিছপা হয়নি। বেঁছে নেয়নি ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্যকোন খারাপ পেশা। বেঁছে নিয়েছে সম্মানীয় মেকানিকের কাজ। তাই সে একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজে শ্রমিকের কাজ শুরু করে বর্তমানে একজন দক্ষ মিস্ত্রী হয়েছন।

মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক আমিনুল ইসলাম জানায়, খোরশেদকে প্রথমে কেউ কাজে না নিলেও আমি তাকে কাজ দিয়েছি এবং খুব অল্প দিনেই সে ভালো কাজ করা শুরু করে। পরবর্তিতে তাকে অনেক গ্যারেজ থেকে ডাকা হলেও সে যায়নি এই বলে যে, শুরুতে তাকে যারা প্রতিবন্ধী মনেকরে অবহেলা করে কাজে নেয়নি। এখন তারা কাজ শেখার পর কেন ডাকছে ? তাই সে ভালো অফার পেয়েও তার মালিককে ছোড়ে যায়নি। খোরশোদ শুধু কজেই নয়, ব্যবহারেও সবার কাছে খুবই প্রিয়। তার কাছে কোন মেয়ে বিয়ে না দিতে চাইলেও আমি অনেক খোঁজাখুজি করে এই মেয়েকে পেয়ে বিয়ে দিলাম। তারাও খুব গরিব তাই মেয়ের বাবার কোন খরচ করতে দেয়া হয়নি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুন্নাহার জানায়, প্রতিবন্ধী হয়েও যে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় তা খোরশেদ আলম সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। আমি তার বিয়ের দাওয়াতে এসে দেখলাম প্রচুর মানুষ তার দাওয়াতে আসছেন এবং তাকে ভালোবাসে বলেই মানুষ তার ডাকে সাড়া দিয়েছে। আমি তার ভবিষ্যত জীবন সুখের কামনা করি।

এদিকে খোরশেদের বিয়ে উপলক্ষে বাড়ি-ঘর সাজানো হয়েছে রঙবেরঙের কাপড় দিয়ে। বাড়ির সামনে তৈরী করা হয়েছে মনোরম গেইট। শনিবার দুপুরে আয়োজন করা হয় বৌভাত অনুষ্ঠান। আশপাশের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষকে দাওয়াতও দেয়া হয় তার বৌভাত অনুষ্ঠানে। এদিকে মাত্র সাড়ে ৩ ফুট লম্বা শারীরিক প্রতিবন্ধী খোরশেদের সাথে প্রায় ৫ ফুট লম্বা কন্যার সাথে বিয়ে দেখতে আশপাশের মানুষ ভির করতে তাদের বাড়িতে। কেউ কেউ তাকে নিয়ে সেলফি তুলেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

x
error: কপি করার অভ্যাস ত্যাগ করুন নিজে লিখতে শিখুন